দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বারবার বিভিন্ন ভাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যা সাধারন শিক্ষার্থী সহ সকলের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করেছে। সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে শিক্ষার মান এবং সুযোগের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। শহর ও গ্রামে শিক্ষার মানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে, যেখানে শহরের স্কুলগুলিতে উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও, গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান নিম্নতর এবং অবকাঠামোও দুর্বল। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব এবং আধুনিক শিক্ষাদান কৌশল সম্পর্কে অজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষাব্যবস্থায়
পাঠ্যক্রমের অপ্রতুলতা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চাহিদার সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রযুক্তির ব্যবহারও শিক্ষার
প্রক্রিয়ায় সীমিত, যা শিক্ষার মানকে আরও সংকুচিত করছে। শিক্ষার প্রতি বেশি মনোযোগ
দেওয়া হলেও, একদিকে পরীক্ষার চাপ এবং সৃজনশীল চিন্তা বিকাশের অভাব শিক্ষার্থীদের
উন্নত মানসিকতা এবং দক্ষতা তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অনেক প্রান্তে
শিক্ষার সুযোগ এখনও সীমিত, বিশেষত মেয়ে শিশুদের জন্য। অনেক পরিবার আর্থিক সমস্যার
কারণে তাদের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
🔰শিক্ষায় বিনিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ
👉বাজেটবরাদ্দ: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট বাজেটের ১৬% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ
করা হয়েছে, যা ২০২০ সালের ১৮% থেকে কম।
👉জিডিপিঅনুযায়ী ব্যয়: জিডিপির মাত্র ১.৪৮% শিক্ষা খাতে ব্যয় হচ্ছে, যা
আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম।
🔰শিক্ষার মান ও ফলাফল
👉গ্লোবালনলেজ ইনডেক্স: ২০২৩ সালে গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান
১৩৩টি দেশের মধ্যে ১১২তম।
👉জাতীয়
ছাত্র মূল্যায়ন: ২০২২ সালের জাতীয় ছাত্র মূল্যায়নে দেখা গেছে,
তৃতীয় শ্রেণির ৬০% এবং পঞ্চম শ্রেণির ৭০% ছাত্র-ছাত্রী গণিত ও বাংলা বিষয়ে গ্রেড
অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৪৫% শিক্ষার্থী বাংলা বাক্য পড়তে
পারে না,৬০% মাধ্যমিক স্কুলে পাঠদান পদ্ধতি পুরনো ।
🔰শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা
👉 শিক্ষকপ্রশিক্ষণ: CAMPE-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষকদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে
🔰শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও প্রস্তুতি
👉শিক্ষার্থীদেরপ্রস্তুতি: বাংলাদেশে প্রায় ২৮% স্নাতক ডিগ্রিধারী যুবক
বেকার, যা শিক্ষার মানের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
👉শিক্ষার বৈষম্য: শহর ও
গ্রামের শিক্ষার মানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেখানে শহরের তুলনায় গ্রামে শিক্ষার
মান কম।বরগুনা জেলায় মাধ্যমিক পাসের হার ৬৭%,
নারায়ণগঞ্জে ৮৯%,পার্বত্য
চট্টগ্রামে স্কুলে উপস্থিতি ৫৮%,
ঢাকায় ৮৬%।
✅প্রাথমিক: ১৪.৫% (গ্রামীণ
এলাকায় ১৭.২%)
✅মাধ্যমিক: ৩৫.৮% (মেয়েদের
ক্ষেত্রে ২৮.৬%)
👉পাবলিক পরীক্ষার ফল:
✅পিইসি: ৯৩.৫% পাস
(গণিতে ৬২% শিক্ষার্থী 'সি' গ্রেড)
✅এসএসসি: ৮২.৪% পাস
(বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৮.৯%)
🔰শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত
|
স্তর |
অনুপাত |
সরকারি নির্দেশিকা |
|
প্রাথমিক |
১:৫৪ |
১:৩০ |
|
মাধ্যমিক |
১:৪৮ |
১:৩৫ |
|
উচ্চ মাধ্যমিক |
১:৩৫ |
১:২৫ |
※ ৩২% মাধ্যমিক স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষকের পদ শূন্য (২০২৪)
🔰অবকাঠামো ও সুবিধা
✅বিজ্ঞান ল্যাব: ৪৫%
মাধ্যমিক স্কুলে নেই
✅লাইব্রেরি: ৬০%
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই
✅ডিজিটাল ডিভাইস: ৩৮%
মাধ্যমিক স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম
👉অবকাঠামোগত সংকট:
|
সূচক |
গ্রামীণ (%) |
শহুরে (%) |
|
বিজ্ঞান ল্যাব |
৩৮ |
৭২ |
|
পর্যাপ্ত টয়লেট |
৪৫ |
৮৫ |
|
বিদ্যুৎ সংযোগ |
৬৮ |
৯৮ |
✅প্রাথমিকে ১:৫৮ (শিক্ষক-শিক্ষার্থী
অনুপাত)
✅৩২% মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
বিজ্ঞান শিক্ষকের পদ শুন্য
🔰শিক্ষার মান: একটি বিস্মৃত ধারণা
🔰শিক্ষার সমস্যা: আজকেরবাস্তবতা
📌প্রাথমিক শিক্ষায় মানেরঅভাব:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার
মধ্যে মানের বৈষম্য এবং এর ফলে শিশুদের দুর্বল শিক্ষা সিস্টেমে ধরা পড়ে।
📌শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের পর্যাপ্ত
প্রশিক্ষণের অভাব, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয় এবং
শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের অবহেলা বাড়ায়।
📌শিক্ষার উপকরণের অভাব: বিদ্যালয়গুলোতে
প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব এবং পাঠ্যসূচির অপ্রতুলতা যা শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা
গ্রহণে বাধা দেয়।
🔰শিক্ষার মানের ঘাটতি:ব্যর্থতার দায় কার?
📌শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং
সহায়ক পরিবেশের অভাব: শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং সহায়ক শিক্ষা পরিবেশের অভাবের কারণে শিক্ষার মানের অবনতি
হয়।
📌সরকারের দায়িত্ব: শিক্ষার উন্নয়নে
সরকারের ভূমিকা এবং বাজেটের সঠিক ব্যবহার না হওয়া। সরকার যে শিক্ষার মান উন্নয়নে
যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না, তার জন্য দায়ী হওয়া যায়।
📌প্রতিষ্ঠান এবং পরিবারের
ভূমিকা: শিক্ষার মানে পরিবার
এবং স্কুলের ভূমিকা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তা আলোচিত হবে। যখন একটি পরিবারের পাশে
সঠিক সাপোর্ট থাকে, তখন শিশুর শিক্ষার মান উচ্চতর হয়।
🔰অপর্যাপ্ত পাঠ্যক্রম এবং আধুনিক শিক্ষার ঘাটতি
🔑বর্তমান পাঠ্যক্রমেরঅব্যবস্থা:
পাঠ্যক্রমের আধুনিকতার অভাব এবং এটি বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার চাহিদার সঙ্গে খাপ
খাইয়ে চলে না।
🔑প্রযুক্তির অভাব: স্কুলগুলোতে আধুনিক
প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও জ্ঞান উন্নত করতে সহায়ক হতে
পারে।
🔑পাঠ্যক্রমের সীমাবদ্ধতা: বর্তমান পাঠ্যক্রম শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক নয়, এটি শুধুমাত্র পরীক্ষার
জন্য সীমাবদ্ধ।
🔰 শিক্ষার মান এবং শৈশবউন্নয়ন: একে অপরের সাথে সম্পর্ক
👉শিশুদের শৈশবের বিকাশ: শিক্ষার মান যদি ভালো
হয়, তবে শিশুদের শৈশবের বিকাশও সুষ্ঠু হয়। এটি শিশুদের মনোভাব, আত্মবিশ্বাস এবং
শারীরিক-মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
👉শিক্ষার গুণগত মান এবংসামাজিক উন্নয়ন: শিক্ষার মান শিশুদের সঠিক মূল্যবোধ এবং সমাজে সঠিক ভূমিকা
পালন করতে সহায়তা করে।
👉শিক্ষার মান ও শিশুর আত্মবিশ্বাস: মানসম্মত শিক্ষা
শিশুদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করে, যা পরবর্তীতে তাদের জীবনে সাফল্য এনে দেয়।
🔰শিক্ষার মানের ঘাটতি:বৈষম্য এবং অসমতার কারণ
👉শিক্ষা ব্যবস্থারবৈষম্য: শহর
ও গ্রামের স্কুলগুলোর মধ্যে শিক্ষার মানের বিশাল পার্থক্য এবং এর ফলে সমান সুযোগের
অভাব।
👉সমাজে বৈষম্য: দরিদ্র ও শিক্ষিত
পরিবারের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য, যেটি শিশুদের ভবিষ্যৎ গঠনে প্রভাব ফেলে।
👉গ্রামের শিশুদের জন্যঅবকাঠামোগত অভাব: গ্রামের স্কুলগুলোর নিম্ন মান এবং
শহরের তুলনায় অবকাঠামোগত উন্নতির অভাব।
🔰শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন:শিক্ষার মানের ঘাটতির অন্যতম কারণ
🔐শিক্ষকদের কম
পারিশ্রমিক:
শিক্ষকদের সঠিক পারিশ্রমিক না দেওয়া এবং তাদের কাজের অবমূল্যায়ন, যা শিক্ষার্থীদের
উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
🔐শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব: শিক্ষকরা যদি পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করেন, তবে
তা শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
🔐শিক্ষকদেরদায়িত্বজ্ঞানহীনতা: শিক্ষকরা যদি শুধু বেতন পাওয়ার জন্য কাজ করেন, তবে শিক্ষার
মানে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
🔰শিক্ষার মানের ঘাটতি এবং
শিশুর ভবিষ্যতের প্রভাব
🔍শিশুর জ্ঞান এবং দক্ষতা: শিক্ষার মানের ঘাটতির
কারণে শিশুর জ্ঞান এবং দক্ষতার উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়, যা তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে
বিপর্যস্ত করে।
🔍পেশাগত জীবনে প্রভাব: শিক্ষার মান না থাকলে
শিশুর ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান এবং পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
🔍তাদের সম্ভাবনা পূর্ণতা: মানসম্মত শিক্ষা শিশুর
সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দিতে সাহায্য করে, যা তাদের ভবিষ্যতে সফল হতে সহায়ক।
🔰শিক্ষার মান উন্নয়নেরপথ: সঠিক পদক্ষেপ এবং উদ্যোগ
🔊শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষায় গুণগত মান
বাড়ানোর জন্য স্কুলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার,
উন্নত প্রশিক্ষণ, এবং প্রাসঙ্গিক পাঠ্যক্রমে শিফট করতে হবে।
🔊সরকারি উদ্যোগ: সরকারের শিক্ষার মান
উন্নয়নের জন্য কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ এবং বাজেটের সঠিক ব্যবহার।
🔊সামাজিক উদ্যোগ: স্কুল ও পরিবারকে
একত্রিত করে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
🔰মানসম্মত শিক্ষার জন্যসমাজের দায়িত্ব: সমন্বিত উদ্যোগ
💥শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
সরকার এবং পরিবার: সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব।
💥জনসচেতনতা: জনগণের মধ্যে শিক্ষার
গুরুত্ব এবং মান নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
💥ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা: একটি
সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নতুন এবং উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যা সকল
শিশুর জন্য কার্যকর হবে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা
বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেখানে চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ পাশাপাশি সহাবস্থান
করছে। প্রাথমিক শিক্ষায় সর্বজনীনতা অর্জন, নারী শিক্ষার প্রসার এবং ডিজিটাল রূপান্তরের
মতো সাফল্যগুলো দেশের জন্য গর্বের বিষয়। তবে, গুণগত শিক্ষার অভাব, শিক্ষক সংকট, আঞ্চলিক
বৈষম্য এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। কোভিড-পরবর্তী
সময়ে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত
প্রচেষ্টা প্রয়োজন যেখানে সরকারি নীতিনির্ধারণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির সমন্বয়
এবং সামাজিক অংশগ্রহণ একসাথে কাজ করবে। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বাস্তবভিত্তিক
শিক্ষাক্রম চালু করার মাধ্যমে আমরা একটি দক্ষ ও উদ্ভাবনী প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব, যা
বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এই উপলব্ধি থেকে সকল স্তরের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে, যাতে প্রতিটি
শিশুর মৌলিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হয় এবং তারা ভবিষ্যতের জন্যপ্রস্তুত হতে পারে।
🔰আপনার জন্য
শিক্ষা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান,
দক্ষতা, মানসিকতা, এবং আচরণ শেখে। এটি একজন ব্যক্তির
শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নতি সাধনে সহায়ক হয় এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে
তার ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির সকল দিকের বিকাশ ঘটানো।
এটি একজন ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব, মূল্যবোধ,
এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে সমাজে শান্তিপূর্ণ
ও উন্নত জীবন গঠন করা সম্ভব।
গুণগত শিক্ষা হল এমন শিক্ষা যা ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক
দিকনির্দেশনা প্রদান করে, তাদের মেধা ও দক্ষতা উন্নত করে এবং তাদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। এটি শুধু বইয়ের পাঠ্যবিষয়ে সীমাবদ্ধ
থাকে না, বরং নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং জীবনদর্শনও অন্তর্ভুক্ত করে।
শিক্ষার মান বলতে এক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত স্তরের
কথা বোঝানো হয়, যা ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর পদ্ধতি,
পাঠ্যক্রম, শিক্ষকগণের দক্ষতা, শিক্ষার পরিবেশ, এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে
সম্পর্কিত। এটি একটি শিক্ষাব্যবস্থার ফলপ্রসূতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নির্ধারণ
করে।
শিক্ষার মানের ঘাটতি বলতে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এমন দুর্বলতা
বা অমিল বোঝানো হয়, যা শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান ও
দক্ষতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। এর মধ্যে অযোগ্য শিক্ষক, অপ্রতুল শিক্ষা উপকরণ,
অপর্যাপ্ত শিক্ষাদান পদ্ধতি, ও স্কুলের অবকাঠামোগত দুর্বলতা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
💚শিক্ষার মান উন্নয়নবলতে কী বোঝায়?
শিক্ষার মান উন্নয়ন বলতে
শিক্ষাব্যবস্থার এমন পরিবর্তন বোঝানো হয়, যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করে। এতে
শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও শিক্ষার পরিবেশের
উন্নতি অন্তর্ভুক্ত হয়, যা শিক্ষার্থীদের আরও ভালো ফলাফল এবং দক্ষতা অর্জনে
সহায়ক হয়।
☝শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে
আধুনিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত হলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
☝প্রযুক্তির ব্যবহার: শ্রেণীকক্ষে প্রযুক্তি
ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
☝সুসংহত পাঠ্যক্রম: পাঠ্যক্রম এমনভাবে
সাজানো উচিত যাতে তা ছাত্রদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান
করে।
☝শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরা:
স্কুলের অবকাঠামো, শিক্ষণ সামগ্রী, এবং শিক্ষা উপকরণের উন্নতি করা প্রয়োজন।
☝শিক্ষার মূল্যায়ন: শিক্ষার্থীদের উন্নতি নির্ধারণে কার্যকরী এবং বৈচিত্র্যময় মূল্যায়ন পদ্ধতির
প্রবর্তন।
শিক্ষার মানের উন্নতি শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। যদি শিক্ষার মান উন্নত হয়, তবে শিশুদের মেধা, সৃজনশীলতা, এবং সামাজিক
দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ভালো শিক্ষা তাদের জীবনকে আরও
উন্নত করে, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবনে সফল হতে
সাহায্য করে।
শিক্ষার্থীর উন্নয়ন বলতে একজন শিক্ষার্থীর
শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, এবং নৈতিক উন্নতির প্রক্রিয়া বোঝানো হয়। এটি
শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের দিকে লক্ষ্য রেখে তার বিভিন্ন গুণাবলি, দক্ষতা,
মনোভাব এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর উন্নয়ন শুধুমাত্র
পাঠ্যবিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার মানবিক গুণাবলী, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, এবং
সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।
শিক্ষার্থীর উন্নয়নের প্রধান দিকগুলো হলো:
☝জ্ঞানগত উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে সহায়তা করা, যা তার একাডেমিক
দক্ষতা বাড়ায়।
☝মানসিক ও শারীরিক উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীর মানসিক স্থিতিশীলতা, আত্মবিশ্বাস এবং শারীরিক সুস্থতা উন্নত করা, যা
তার সাধারণ জীবনযাত্রা ও আচরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
☝সামাজিক দক্ষতা:
শিক্ষার্থীকে সমাজের সাথে মেলামেশা, দলবদ্ধভাবে কাজ করা, এবং সঠিক সামাজিক সম্পর্ক
গড়ে তুলতে সহায়তা করা।
☝নৈতিক এবং মূল্যবোধ শিক্ষা:
শিক্ষার্থীকে সৎ, দয়ালু, সহানুভূতিশীল, এবং সামাজিক দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে
গড়ে তোলার জন্য নৈতিক শিক্ষা প্রদান।
☝সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধান দক্ষতা:
শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তুলতে সহায়ক পদ্ধতি।
শিক্ষার
মাধ্যমে এই সব দিকের উন্নয়ন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবনের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ, যা তাকে সফল, সুস্থ এবং সম্পূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে
সাহায্য করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন